প্রকাশিত: ২৪/০১/২০১৭ ৯:৪৩ পিএম

রাশেদুল তুষার, চট্টগ্রাম:: দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপজেলা টেকনাফের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদের মাঝখানের ছোট্ট দ্বীপটির স্থানীয় নাম ‘জালিয়ার দ্বীপ’। টেকনাফ শহরে ঢোকার মুখে উঁচু ন্যাটং পাহাড় থেকেই চোখে পড়ে ২৭১ একরের দ্বীপটি।

এর একপাশে টেকনাফ আর অপর পারে মিয়ানমার। পাহাড় আর নদীঘেরা নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের আঁধার এই প্রাকৃতিক দ্বীপটিকে ঘিরেই গড়ে উঠছে দেশের প্রথম বিশেষায়িত পর্যটন পার্ক। ‘নাফ ট্যুরিজম পার্ক’ নামের এই বিশেষ পর্যটন স্পটটি আগামী দুই তিন বছরের মধ্যেই দৃশ্যমান হয়ে উঠবে পর্যটকদের জন্য। আর পর্যটনের নতুন সম্ভাবনাটি তত্ত্বাবধান করছে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা)। সারা দেশে এ পর্যন্ত নির্ধারিত ৭৪টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে এটি একটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে তিন হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং ১৬ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে মনে করছে বেজা কর্তৃপক্ষ।

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকার এই স্পটে ডিজাইন বিল্ড ফিন্যান্স অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (ডিবিএফওটি) পদ্ধতিতে ৫০ বছর মেয়াদে অনন্য একটি পর্যটন স্পট গড়ে তোলা হবে। এই প্রকল্পে ভূমি উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানানো হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে একক কিংবা কনসোর্টিয়াম গড়ে বিনিয়োগ করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে বেজার চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠান ইউনিকনসাল্ট দিয়ে ২৭১ দশমিক ৯৩ একর আয়তনের দ্বীপটিতে সম্ভাব্যতা জরিপ চালিয়েছি। সেই অনুযায়ী পর্যটনের জন্য একটি গাইডলাইন ঠিক করেছি। আমরা ৫০ বছর মেয়াদে বিনিয়োগ করার জন্য আগ্রহীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে তা চালু করা যেতে পারে। ’

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগের প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, ‘মাটি ভরাট, সবুজ বেষ্টনী তৈরী, ঝুলন্ত ব্রিজ স্থাপনের জন্য আমাদেরই প্রায় আড়াই শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এর পরে যারা জায়গাটি নেবে তাদেরও কমপক্ষে তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ আশা করছি। ’ প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতেই বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

বেজা সূত্র জানায়, এই ট্যুরিজম পার্কে নদীতে ঝুলন্ত ব্রিজ, বিশেষ ইকো ট্যুরিজম, কেবল কার, রাত্রি যাপনের জন্য ইকো-কটেজ ও রিসোর্ট, নদীর মধ্যে ভাসমান রেস্টুরেন্ট, ফান লেক, ওয়াটার স্পোর্টস, নদীর পানির মধ্যে অ্যাকুয়া পার্কসহ নানাবিধ পর্যটন সুবিধা থাকছে। দীর্ঘদিন ধরে লবণ ও চিংড়ি চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসা দ্বীপটি আগামী দুই তিন বছরের মধ্যেই পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে। বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করতেই এ স্পটকে সেভাবে গড়ে তোলা হবে।

এ প্রসঙ্গে বেজা চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটক আসে না বললেই চলে। আগে চার লাখের মতো আসত, এখন সেটাও কমেছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। নিজের সংস্কৃতি অক্ষুণ্ন রেখে অন্যের সংস্কৃতির প্রতি সম্মান, সহনশীলতা এবং পছন্দকে মূল্যায়ন না করলে বিদেশিরা আসবে না। আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। তবে বিশেষায়িত নাফ ট্যুরিজম পার্কটি বাস্তবায়ন হলে আশা করি বিদেশিরা আবারও বাংলাদেশমুখী হবে। ’

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পুরো টেকনাফের চেহারা পাল্টে যাবে বলে মনে করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল আলম। এ প্রসঙ্গে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতে নাফ নদের মধ্যখানের এই দ্বীপটিতে ট্যুরিজম ডেভেলপ করতে চায়। এ জন্য বেজাকে পুরো দ্বীপটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই জায়গার পুরোটাই সরকারি খাসজমি। তারা জেটিসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শুরু করেছে। ’

তিনি বলেন, ‘গত ১০০ বছরেও এই দ্বীপে পানি ওঠেনি। তার পরেও ১০ ফুট উঁচু করতে বালি ফেলা হবে। পর্যটন স্পটের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে জার্মান, নেদারল্যান্ডসের বিশেষজ্ঞরা এসেও জায়গাটি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। ’

টেকনাফে সমুদ্রসৈকত ঘিরে বেজার তত্ত্বাবধানে ‘সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক’ নামের আরেকটি বিশেষ পর্যটন স্পট গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। আরো বৃহৎ আকারে ১০২৭ একরের জায়গাজুড়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য ইতিমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ করে বেজাকে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এই ট্যুরিজম কমপ্লেক্সে তারকামানের হোটেল, ইকো-ট্যুরিজম, বিনোদনসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

টেকনাফের উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এই দ্বীপটিতে আগে লবণ ও চিংড়িঘেরের চাষ হতো। সেখানে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন লবণ ও চিংড়ি চাষ করে আসছে।

বেজার চেয়ারম্যান সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে জানান, সরকার দেশের অর্থনীতিতে গতি আনতে এবং পরিকল্পিত শিল্পায়নের জন্য পুরো দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। আগামী ৫০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে দেশে মোট এক লাখ একর জমি শিল্পায়নের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ৭৪টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও মিরসরাইয়ে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। একই সঙ্গে পর্যটনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে কক্সবাজার এলাকায় আরো কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

পাঠকের মতামত

খেলাভিত্তিক শিক্ষায় ব্র্যাকের তথ্য বিনিময় অনুষ্ঠান

শিশুদের খেলাভিত্তিক শেখা, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ও মনোসামাজিক বিকাশ নিশ্চিতে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ...

১২ ফেব্রুয়ারি ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া ওয়াজ মাহফিল নিষিদ্ধ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ধর্মীয় প্রচার কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ...